দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার টংগুয়া হাসনাবাগ দ্বি-মুখী ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি গঠন নিয়ে মত বিরোধের সৃ‌ষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় সচেতন সমাজে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

জানা যায়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর ওই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহাগ চন্দ্র সাহা’র সভাপতিত্বে মাদ্রাসার সহ- সভাপতি গঠন নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় খানসামা ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক মো. সফিকুল ইসলামের নাম প্রস্তাব করেন দাতা সদস্য ইসমাইল হোসেন এবং সমর্থন করেন অভিভাবক সদস্য বেলাল হোসেনসহ আরো অনেকে। এ ছাড়া ওই আলোচনা সভায় আর কোন সহ-সভাপতির নাম প্রস্তাব না হওয়ায় মো. সফিকুল ইসলাম সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।

এরপর গত ৩ অক্টোবর জরুরি আলোচনা সভার আয়োজন করে প্রতিষ্ঠান কতৃপক্ষ। উক্ত আলোচনা সভার রেজুলেশন বহিতে নির্বাচিত সহ-সভাপতির নাম ফাঁকা থাকায় হতভম্ব হয়েছেন প্রস্তাবনাকারী দাতা ও অভিভাবক সদস্যরা। আলোচনা সভার মূল বিষয় ছিল, সদ্য (এনটিআরসি) নিয়োগপ্রাপ্ত চার জন শিক্ষকের যোগদান নিয়ে। পরবর্তীতে দাতা, অভিভাবক ও শিক্ষক প্রতিনিধিরা জানতে পারেন সহ-সভাপতি মো. সফিকুল ইসলামের পরিবর্তে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এর পরামর্শক্রমে মনগড়াভাবে নির্বাচিত করেন। এতেই তৈরি হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও দণ্ড এর সৃষ্টি।

এ বিষয়ে দাতা সদস্য ইসমাইল হোসেন জানান,

‘আমি ও আনিসুর প্রার্থী ছিলাম। স্থানীয় লোক হিসেবে সফিকুল ইসলাম একজন ভালো মানুষ বলে আমি তাকে প্রস্তাব করি। এতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ নিজেও তাকে সমর্থন করেন। কমিটি হওয়ার পর আমরা দর্শনীয় স্থানে ঘুরতেও গেলাম। কমিটি নিয়ে আমরা বেশ আনন্দিত ছিলাম। পরবর্তীতে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কিভাবে সহ-সভাপতি হল আমরা বুঝতেও পারলাম না।’

 

এ বিষয়ে শিক্ষক প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম বাবু জানান, ‘প্রথম মিটিং এ শুধুমাত্র একজনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। দ্বিতীয় মিটিং এ নির্বাচিত সহ-সভাপতিকে বাদ দেওয়ার কোন আলোচনাই হয়নি এবং তৃতীয় মিটিংয়ে সভাপতি মহোদয় বলেছেন সহ-সভাপতির বিষয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে।’ এ বিষয়ে আরেক শিক্ষক প্রতিনিধি সাবিরা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনিও একই কথা বলেন।

সহ-সভাপতি পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিভাবক সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে জিজ্ঞাসা করেছি কেন পরিবর্তন হলো? তিনি উত্তরে বলেন, যা হয়েছে উপর মহলের নির্দেশে সহ-সভাপতি পরিবর্তন করা হয়েছে।’

 

অভিভাবক সদস্য আক্তারুল ও আনিছুর বলেন, ‘প্রথম মিটিং এ সফিকুল ইসলাম ছাড়া আর কোন নাম প্রস্তাব না হওয়ায় তিনি সহ-সভাপতি হন।’

 

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘উপস্থিত আলোচনা সভায় সকলের সম্মতিক্রমে আমি সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। আমাকে সহ-সভাপতি পদ থেকে বাদ দিতে গেলে সর্বসম্মতিক্রমে আরেকটি আলোচনা সভা করে বাদ দিতে হবে। কিন্তু সেটা না করে, কোনরকম আলোচনা ছাড়াই আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

যদি আমাকে নিয়ে কোন সমস্যা থাকতো সেটা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেত। আমাকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাইলে, তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।’

 

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সানাউল্লাহ বলেন, ‘প্রথম আলোচনা সভায় সফিকুল ইসলাম বাদেও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। সেখানে সফিকুল ইসলাম নির্বাচিত হলেও সভাপতি মহোদয় বলেছেন, সহ-সভাপতি নির্বাচনের বিষয়ে কারো যদি কোন দ্বিমত থাকে তাহলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমাকে জানাবেন। হয়তোবা কেউ সভাপতি মহোদয়কে এই পরিবর্তনের বিষয় জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, সহ-সভাপতি পরিবর্তন উপর মহলের নির্দেশেই করা হয়েছে। সেটা আপনি বুঝেই নেন।’

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হক বলেন,’প্রথমে আমার নাম আসার কথা ছিল এরপর ওই ভদ্রলোকের নাম আসে। উনার নাম প্রস্তাবে আসছিল কিন্তু রেজুলেশনে আসে নাই। এই পদ নিয়ে আমার কোন আগ্রহ নেই কিন্তু উনারা যেহেতু বানিয়েছে তাই আছি। আমার নাম প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রস্তাব করেন। পরবর্তী সভায় উনার নামে আপত্তি থাকায় আমাকে সহ-সভাপতি করা হয়েছে।’

 

এ বিষয়ে তৎকালীন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহাগ চন্দ্র সাহাকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমার তো এত কিছু মনে নেই। যিনি বর্তমানে দায়িত্বে আছেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ নূর-এ-আলমকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।